অঞ্জু খারবান্দা(দিল্লী) । अनुवाद; बेबी सिंह कोरफोरमा

“স্যার, বারো হাজার টাকা অগ্রিম হিসাবে দেবেন?” কোষাধ্যক্ষের টেবিলে চায়ের পেয়ালা রাখতে রাখতে চাপরাসি রামচন্দ্র বলল।
“আরে! গত সপ্তাহে তো তিন হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছ, এ হপ্তাহে আবার?……পুরো মাইনে তো এইভাবে উড়ে যাবে তোমার!” কোষাধ্যক্ষ বেশ ধমক দিয়ে কথাগুলো বললেন।
“স্যার, গত সপ্তাহে মেয়ের ভর্তির ফর্ম ভর্তি করেছিলাম, এ সপ্তাহে ফিজ ভরবো।” বলতে গিয়ে রামচন্দ্রের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। সেই দেখে কোষাধ্যক্ষ ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার করে বলল “ তাহলে সামনের মাস উপবাস করেই কাটিয়ে দাও? মেয়ে সন্তানের জন্য কেউ এইভাবে টাকা উড়ায়?”
“ না না স্যার, মেয়ে কিংবা ছেলে যাইহোক , তারা তো আমারই বাচ্চা , না!” রামচন্দ্র বেশ জোরের সঙ্গে বলল কথাগুলো।
“বোকা কোথাকার !” চায়ের পেয়ালা মুখে দিতে দিতে কোষাধ্যক্ষ নিজের মধ্যেই বিড়বিড় করলেন।
“মহেশ! রামচন্দ্রকে আমার কেবিনে পাঠিয়ে দাও।” নিজের কাঁচের কেবিন থেকে সব দেখে বড়সাহেব কোষাধ্যক্ষকে টেলিফোনে বললেন ।

“যাও, বড়ো সাহেব তোমাকে ভিতরে ডেকেছেন। এবার উনিই তোমায় সোজা করবেন!” এই বলে কোষাধ্যক্ষের চোখেমুখে একটা ক্রুর হাসি খেলে গেল।
রামচন্দ্র বেশ ঘাবড়ে গিয়ে বড়ো সাহেবের ঘরে ঢুকে স্যারকে বললেন “প্রণাম সাহেব”।
“প্রণাম! তোমার অগ্রিম টাকা চাই!” বড়ো সাহেবের ভারী স্বরে কেবিন গমগম করে উঠল।
“ হ্যাঁ! মেয়ের পড়াশোনার জন্য স্যার! আমার মেয়ের পড়াশোনা করার ভীষণ ঝোঁক, বড়ো অফিসার করতে চাই!” রামচন্দ্র কোনক্রমে কথাগুলো বলল।
“হু!” বড়ো সাহেব বেশ চিন্তামগ্ন হয়ে গেলন, ঘরে একটা নিস্তব্ধতা নেমে এল।
“সাহেব! যদি অগ্রিম পাওয়া যেত তো………” একটু ভরসা করে রামচন্দ্র কথাগুলো বলেই ফেলল।
“এই নাও!” বলে সাহেব ড্রয়ার থেকে একটা খাম বের করে তাতে টাকা ঢুকিয়ে খামটা রামচন্দ্রের দিকে এগিয়ে দিল।
“এটা কি সাহেব!” রামচন্দ্রের মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেল।
“তোমার মেয়ের পড়ার খরচ!” আর তোমাকে কারোর কাছে হাত পাততে লাগবেনা।
“কিন্ত”……!রামচন্দ্রের মাথায় আকাশ সমান চিন্তা এসে ভিড় করতে লাগল, মন উতালপাতাল করতে লাগল।
“কি চিন্তা করছ, কিভাবে ঋণ শোধ করবে?”
“……” রামচন্দ্রের মুখ থেকে কোন কথা বের হল না, যেন জিভ আর তালুতে আটকে গেছে।
“কি ভাবছ, কিভাবে ঋণ শোধ করবে?”
বড়ো সাহেবের এইভাবে রহস্যের উত্তরে রামচন্দ্রের মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসছিল “ সাহেব আমরা গরীব ঠিকই কিন্তু বেইমান নই” কিন্তু রামচন্দ্রের মুখ দিয়ে কথা গুলো বের হল না।
হটাৎ বড়ো সাহেবের কথায় রামচন্দ্রের সম্বিৎ ফিরল।
“……শুধু তোমার মেয়েকে বলবে, পড়াশোনা করে সে যখন প্রতিষ্ঠা পাবে তখন সেও যেন কোন দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ায়! ব্যাস সেদিন তোমার ঋণ সেদিন শোধ হয়ে যাবে।”
-0-
অঞ্জু খারবান্দা(দিল্লী)
লেখিক পরিচিতি- বয়স- ৫০, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। অধ্যাপিকা, রেডিও আর্টিস্ট, অনুবাদক এবং গল্পকার। প্রকাশিত গ্রন্থ ‘উজলি হোতি ভোর’ (লঘুকথা সংগ্রহ)। লেখিকা পাঞ্জাবী, নেপালি, সরাইকি (মুলতানের ভাষা), গুজরাতি, মৈথেলী, ওড়িয়া ও ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।